Main Menu

Monday, April 1, 2019

নীল ডায়েরি থেকে > "লিস্ট" নংঃ ৩৯ রাতগল্প (পর্ব-০৩ ) নিতু কে একদিন দেখলাম নতুন কারো গাড়িতে একই ভাবে, একই সাজে, একই হাসি তে। সবই ঠিক আছে শুধু কয়েক মূহুর্তের ব্যবধানে পাশের মানুষটির আমূল পরিবর্তন। হয়তো নতুন কারো আঙ্গুলে আঙ্গুল গুঁজে তাকে বৃথা স্বপ্ন দেখানো। যে স্বপ্নে ভবিষ্যৎ বাড়ির ব্যালকনির ডিজাইন পর্যন্ত আঁকা হয়ে যাবে। এঘটনার পর দু একজন কাছের বন্ধু ছাড়া, কোনোরূপ গাঢ় সম্পর্কের পথ আর মাড়াই নি। দুঃখ ভুলে থাকতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ শুরু করলাম। এখনো মাঝেমাঝে হুটহাট বেরিয়ে পড়ি। একবার অবশ্য আত্নহননের চেষ্টাও করেছিলাম। পারিনি বলবো না; আসলে মরিনি। সৃষ্টিকর্তা মারেননি। “কিন্তু এ গল্প আমাকে শোনালেন কেন?” “শোনালাম এজন্য যে আপনারা প্রস্টিটিউট পেটের তাগিদে আর নিতুরা বিলাসিতায়। আর আমি নিতুকে সত্যিই ভালোবেসে ফেলেছিলাম, তবে অনেক কস্টে ধাক্কাটা কাটিয়েছি বলতে পারেন” জরি খিলখিলিয়ে হাসতে হাসতে বলে, “ওমা, তাইলে তো আপনে ভালোই ছ্যাঁক খাইসেন দেখতেসি” “মজা নিচ্ছেন বুঝি! আসলে ওটা একটা মোহ ছিলো, ছ্যাঁক তো খেয়েছি তার আরো পরে, আর সেটা দমাতেই তো এখানে আসা আমার, যখন শুনলাম…। “কি?” “না, থাক” “ক্যান, আপনের ছলনার গল্প শুনলাম, আপনের মায়ার গল্পটাও বলেন” আবির মৃদু হেসে বললো,”অবশ্যই বলবো, বলবো বলেই তো এসেছি। কিন্তু তার আগে তো আমাকে আপনার গল্পটাও শুনতে হবে তাইনা” “আমার গল্প?” “হুমমম, আপনার গল্প! আপনার এ জীবনে আসার গল্প, এপথে আসার গল্প, আপনার দুঃখ দুর্দশার গল্প। যারাই এপথে আসে তাদের প্রত্যেকেরই কারো না কারো কোনো না কোনো গল্প থাকে?” “সে বিরাট হিশটিরি, আপনে শুইনে কি করবেন?” “আহা বললাম তো, কিছু শুনবো এবং কিছু শোনাবো বলেই তো এসেছি, এত ইতস্ততঃ না করে বলে ফেলুন” “বড় দুঃখের কাহিনী সাব, সেই কথা মনে পড়লে আমার এখনো চোখের পানি আসে।” তারপর, খানিকক্ষন দুজনই বেশ নিশ্চুপ, নীরবতা ভেঙে জরিই প্রথম মুখ খোলে.. “ঠিক আছে, শুনতে যখন চাইলেন তখন বলি…চোখে জল নিয়ে জরি বলতে শুরু করলো, ইতিমধ্যেই গলায় স্বরও কেমন কাঁদো কাঁদো শোনাচ্ছে ..মনে হচ্ছে অনেককালের জমেথাকা কোনো কষ্টের মেঘ আজ বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ার অপেক্ষায় …… জরিদের গ্রামের নাম ছিলো ফুলপুর। ছ সাত বছর আগেও সে গ্রামের রাস্তাঘাটের চেহারা ছিলো কংকালসার শরীরে চিমসানো গালভাঙা বুড়োদের মতো। একেবারে বেহাল দশা যাকে বলে। মাইল কয়েক দূরে আধাপাকা বিদ্যালয়ই ছিলো ছ সাত গ্রামের শিক্ষা ব্যাবস্থার একমাত্র অবলম্বন। এ অঞ্চলে একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বলতে ছিলো হাজী করিম উচ্চ বিদ্যালয়। পায়ে হাটা কাচা পথ পেরিয়েই বিদ্যালয়ে ছুটতে হতো জরিকে। মাঝেমধ্যে এর ওর কাছ থেকে চেয়েচিন্তে বই টই পড়ে টেনেটুনে যখন সপ্তম শ্রেণীতে তখন অকালেই জরির মা মরলো কলেরায়। যাতায়াত ব্যাবস্থা, অন্ধবিশ্বাসের মায়াজাল টপকানো কিংবা যে কোনো অযুহাতেই হোক ডাক্তার হসপিটালের ছিটেফোঁটাও দেখা মিললো না। ধোলু ফকিরের তাবিজ কবচ, অল্পবিস্তর ঝাড়ফুঁক-পানিপড়া কোনরুপ সদগতি করতে না পারায় জরির মাকে বেশ অকালেই দুনিয়া ছাড়তে হলো। জরিকে ছাড়তে হলো মায়ের ভালবাসা। আর জরির বাবা নয়া ভালবাসার খোঁজে ঘরে তুললো জরির নতুন মা কে। প্রথম দিকে নতুন মা মিষ্টি মিষ্টি কথা শোনালেও ধীরে ধীরে সে মিষ্টি তেতো তে পরিণত হতে বেশি সময় লাগেনি। মাস কয়েক যেতে না যেতেই সে বুঝতে শুরু করে নতুন মা আর নতুন নেই; বেশ পুরোনো হয়ে গেছে, সেটা তার সৎ মা। দিন গড়াতে লাগলো আর জগৎসংসারে একলা জরির চোখের সামনে সৎমায়ের আসল অবয়বটা ধীরে ধীরে ফুটে বেরুতে লাগলো। তারপরেও মানসিক কিংবা শারীরিক অত্যাচারে জর্জরিত হয়েও কোনরকমে খেয়ে পড়ে বেশ টিকেই ছিলো। কিন্তু সেই টিকে থাকার দৌড়ে আচমকাই একটা দূর্ঘটনায় যেন অকস্মাৎ ই মাথায় বজ্রপাত ঘটলো। বছরের মাঝামাঝি তখন সবে অষ্টম শ্রেণীতে। হাসিখুশি মেয়েটি আচমকা এমন কান্ড বাধিয়ে বসবে তা বোধহয় কেউ ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পারেনি। মাঝে মাঝেই ক্লাসের একটা ছেলে বেশ ইয়ার্কি করেই ক্ষ্যাপাতো, “তুই আমার বউ হবি”…ক্লাসেও অনেকেই তাকে ভাবী বলে ক্ষ্যাপাতো। একদিন মাঠে খেলতে খেলতে আচমকাই ছেলেটা তাকে বলে বসলো “তুই আমার বউ হবি”… আর অমনিই ও রেগে গিয়ে ছেলেটিকে সজোরে ধাক্কা মেরে বসে। তার হয়তো খেয়ালেই ছিলো না একদম ইঞ্চি কয়েক পাশেই গভীর পুকুর। ধাক্কায় তাল সামলাতে না পেরে ছেলেটি পুকুরে গিয়ে পড়ে। সাঁতার না জানা ছেলেটি গভীর জলে হাবুডুবু খেতে থাকে। অবস্থা বেগতিক দেখে আতংকিত মনে ছুটে সেখান থেকে পালিয়ে আসে সে। গ্রামের চেয়ারম্যান সাহেবের ছোটভাইয়ের ছেলে হওয়ায় জরির পরিবারের ভয় ও উৎকন্ঠাও তখন তুঙ্গে। সেটা পুরোদস্তুর মাত্রা ছাড়ায়, যখন রাতের বেলা রহিম মিয়া ফিসফিসিয়ে খবর দিলো, “বাঁচতে চাইলে মাইয়ারে লইয়া তাড়াতাড়ি পলাও, অবস্থা তো সুবিধার না, পোলা তো শুনলাম মইরা গেছে”… সে রাতেই ঘুটঘুটে অন্ধকারে জরির পরিবার গ্রাম ছাড়লো। দু দিন বাদে তাদের আশ্রয় হলো ঐ গ্রামেরই নিকটবর্তী মাইল কয়েক দূরে ভারতীয় সীমান্তবর্তী এক গ্রামে। এর মাসকয়েক পরেই জরির বাবা ভারতে চলে যায়। সেই যে গেলো আর ফিরে এলো না। দেখতে দেখতে একবছর পেরিয়ে গেলো কিন্তু জরির বাবার কোনো হদিশ মিললো না। এদিকে তার উপর নেমে এলো সৎমায়ের অত্যাচারের খড়গ। তবে সদ্য কৈশোর পেরিয়ে যৌবনে পা দেয়া মেয়েটির চোখ একদিন আনন্দে জ্বলজ্বল করে উঠলো। তবে তা আনন্দ ছিলো নাকি আশার ধোঁয়াশা তা বুঝতে বেশ দেরি হয়ে গিয়েছিল … “জরি মা, এদিকে আয়” “কি চাচা?” “আরে জব্বর খবর আছে” “কি?” “আমি যেইডা দেখছি, শুনলে তুই বিশ্বাস করতে পারবি না” “কি??” “আরে, তর বাপের সাথে আমার দেখা হইসিলো তো?? তর কথা জিগাইলো?” “সত্যি!!!” জরির চোখ জ্বলজ্বল করে ওঠে! হয়তো এতোদিনে তার কষ্ট ঘুচবে এই আশায়। “কোনহানে” “কোনহানে আবার? ভারতে” “ক্যামনে?” “তুই তো জানোস আমি মাঝেসাঝে ভারতে যাই, জিনিস-পাতি আনি, আমার আবার গরুর ব্যাবসাটাও দেখতে হয়। গত সপ্তায় গেলাম ভারতে, ওইখানে বাজারে এক লোকেরে দেইখা মনে হইলো ইনারে কই জানি দেখছি মনে হয়, এই বইলা কাছে যাইয়া জিজ্ঞেস করতেই.. আরে বদরুল ভাই না? বইলে আমারে বুকে জড়ায় ধরলো, আমি তো অবাক। যার কথা কইতাছি, এইটাই তর বাপ” “সত্যি” “সত্যি না তো, আমি বানায় কইতেছি নাকি” “তারপর” “তারপর আমার সেকি খাতির যত্ন, এমন যত্ন বিদেশে নিজের লোকরেই মাইনসে করে।” “আব্বা আমার কথা কিছু কইছে”, আনন্দমাখা জলে জরির চোখ চিকচিক করে ওঠে। “আরে কইছে মানে, সেই কথা বলতেই তো এইখানে আসলাম রে পাগলী” “কি কইসে?” “তোকে ঐখানে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিয়া যাইতে বলসে” জরি অবাক হয়ে প্রশ্ন করে, “আমি যাবো??” “নয়তো কি? তোর বাপে আসবে? তোর বাপের কাজ ফালাইয়া এক চুল নড়নের টাইম নাই ঐখানে” উত্তরে জরি নিশ্চুপ থাকে। “কি রে কথা কস না ক্যান, কি চিন্তা করোস” “কিন্তু আমি যাবো ক্যামনে, ঐদেশে যাইতে গেলে শুনসি পাসপোর্ট না কি জানি লাগে?” “আরে ধুর!! পাগলী কয় কি? কিচ্ছু লাগবে না, আরে তর বাপে গেছে না, আমি যাইনা, আরে.. আমারে দেখলে ঐ বিডিআর দেখছস?, খাড়াইয়া ছ্যালুট দেয়, সব হইতেছে গিয়া ট্যাকা, বুঝলি!” “আমি ট্যাকা পাবো কই?” “আমি আছি কি জন্যে, তর বাপেরে কথা দিসি। একবার যখন দায়িত্ব নিছি, তখন যাওয়ার সব দায় দায়িত্ব আমার।” “কবে যাইবেন?” “আমি যাবোনা, আমার অতি বিশ্বস্ত এক লোক আছে, সে নিয়ে যাবে! পরশু রাইত ১২টার পর রেডি থাকবি” “রাইতে?” “হ, রাইতে। আরে বিনা টাকায় চুরি কইরা যাবো, রাইতে নাতো কি দিনে নাকি? তবে বিডিআররে খালি চা পান বাবদ কিছু দিতে হবে। ঐটা আমি দিয়ে দিবোনে” গল্প বলার মাঝে আচমকাই কয়েকবার দরজার খটখট্ শব্দটায় সম্বিত ফেরে আবির ও জরির। তন্ময় হয়ে গল্প শুনছিলো আবির। জরির গল্প বলায় বাধা পড়ে। আবির খানিকটা চমকে ওঠে। “কে এলো দরজায় এতো রাতে” জরি বিরক্ত হয়ে উত্তর দেয়, “আমার এইখানে বদমাইশ মানুষ ছাড়া আর কে আসতে পারে” আবির মৃদু হেসে জিজ্ঞাসা করে,”আমাকেও কি আপনার বদমায়েশ মনে হয়” জরি মুচকি হেসে বলে,”এখন তক তো কোনো বদমাইশি দেখি নাই, হিহিহি দেখি কতক্ষন ভদ্রলোক থাকেন?” “আপনার হাসি টা না বেশ রহস্যময়” “তাই বুঝি?” “হুমমম!” এই কে রে দরজায়? এত রাইতে কে?, হাঁক ছাড়ে জরি। “আমি!”, দরকার ওপারে পুরুষের কন্ঠস্বর। “সকালের আগে দরজা খোলা যাবে না, নিষেধ আছে, রুমে লোক আছে” কিছুক্ষণ পরে আর কোনো শব্দ পাওয়া যায় না। হঠাৎই আবির বলে, “বেশ ডুবে গিয়েছিলাম আপনার জীবনের ভেতরে, আপনার কষ্টটা অনুভব করতে পারছি” “চা খাবেন!” “যদি বিষটিষ বা ঔষধ না মিশিয়ে দেন তবে চলতে পারে এক কাপ, অবশ্যই চিনি ছাড়া”

By kolpobazz

No comments:

Post a Comment

Popular Posts