Main Menu

Friday, May 10, 2019

[সাইকো থ্রিলার] শোধ (শেষ পর্ব) লিখাঃএন এম শান্ত মাইশা খুন হবার প্রায় এক মাস হয়ে গেছে। খুনিটা এতদিনে একবারও ফোন করেনি। তবে ইনভেস্টিগেশন পুরোদমে চালিয়ে গেছে মুহিবুল, সাথে ছিল আকাশ । রাতে বোধহয় ঘুমাতে পারে না ছেলেটা, চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে। হঠাৎই একদিন মুষড়ে পড়া আকাশ কে নিয়ে জার্মান অ্যাম্বেসীতে হাজির হল মুহিবুল। জার্মানীতে যেতে ইচ্ছুক এমন লোকদের জন্য ত্রৈমাসিক জার্মান ভাষার একটা কোর্স করায় তারা। গত দশ বছরে যারা যারা এই কোর্স করেছে প্রত্যেকের ইনফরমেশন নেয়াটাই ছিল উদ্দেশ্য। রিসিপশনে কথাটা বলতেই, অন ডিউটিতে থাকা মেয়েটা এমনভাবে তাকালো যেন মুহিবুল অ্যাম্বেসীতে বোমা ফিট করার জন্য সিকিউরড একটা জায়গা খুঁজছে। বেশ কিছুক্ষণ তদবীর করে শেষ পর্যন্ত ডাটাবেস রুমে যাবার অনুমতি পেল তারা। বেশি না, প্রায় শতক বারোর মত ফাইল ঘাটতে হবে। মুহিবুলের লজিক, ছেলেটা আগে থেকেই জার্মান ভাষা জানত। কেননা প্রতিশোধ নিতে জার্মান ভাষা শিখবে তার কোনো লজিক নেই। তারপরও সব ফোল্ডার সে চেক করবে। শুরু থেকেই শুরু করল ওরা। টানা দুই ঘন্টার ম্যারাথন গরু খোঁজা চালিয়ে অবশেষে পাঁচজনকে বের করা গেল, যাদের ফোল্ডারে থাকা ছবির সাথে খুনির চেহারা অনেকাংশে মেলে। কিন্তু আকাশ অ্যাকিউরেট কোনোটা বাছতে পারছে না। পাঁচজনের ফোল্ডার নিয়েই অফিসে ফিরে এল মুহিবুল। সীমান্তকে অর্ডার করল, “খুঁজে বের কর এদের মধ্যে কে মিসিং।” খুন করে নিশ্চই ঘরে বসে মুভি দেখবে না। শেষ পর্যন্ত অবশ্য খুঁজে বের করতে হয়নি। ছেলেটা নিজেই ফোন করেছে আকাশ কে। লাউডস্পীকারে শুনছে মুহিবুল। “আকাশ , তোমার ডিটেকটিভের মাথার তারিফ করতেই হয়। জাতে মাতাল হলেও তালে ঠিক। তোমার কি ধারণা? যাকে খুন করার জন্য পাঁচ বছর ধরে অপেক্ষা করছি, তার প্রতিটি স্টেপ সম্পর্কে আমি খোঁজ রাখি। এমনকি তুমি যে পর্ন এডিক্টেড সেটাও আমি জানি।” আকাশ এখনও চুপচাপ শুনছে। এদিকে মুহিবুল মনে মনে ভাবছে, ছেলেটা যেই হোক না কেন, দুর্ধর্ষ চালাক। “আমি যদি তোমার কাছে ধরা না দেই, তুমি কোনোভাবেই আমার খোঁজ পাবে না। যে পাঁচজনের ফোল্ডার তোমার হাতে আছে, ভালো করে খেয়াল করে দেখ, একজনও আমি নই।” মুহিবুল হাত দিয়ে টেবিলে মৃদু বাড়ি দিয়ে নিজের চেয়ারে হেলান দিয়ে বসল। “তোমার মনে আছে? আজ থেকে বছর তিনেক আগে মাইশা এক বছরের জন্য ইটালি গিয়েছিল?” “হ্যাঁ। মনে আছে।” এতক্ষনে মুখ খুলল আকাশ । “কেন গিয়েছিল জানো?” “পড়াশুনার জন্য।” “না। ও কোথাও যায় নি। ও দেশেই ছিল। শি ওয়াজ প্রেগনেন্ট। এই ব্যাপারটা তোমার কাছ থেকে লুকানোর জন্যই সে ইটালি যাবার কথা বলেছিল।” আকাশ স্মৃতিচারণ করছে এক রাতের কথা। মাইশা এতবড় একটা ব্যাপার কিভাবে লুকিয়ে গেল? “এই একবছর ও নিজের সন্তানকে একটু একটু করে বড় করেছে, নিজের ভেতর। তারপর ওকে রেখেছে একটি অরফানেজে। প্রতিদিন গিয়ে দেখা করে আসত তোমার মেয়ের সাথে। ও হ্যাঁ। তুমি একটা মেয়ের বাবা।” আকাশ ভীষণ চমকে গেছে। ছেলেটা এ কেমন কথা শোনাচ্ছে তাকে। এ কিসের ইঙ্গিত? “তোমার মেয়ের নাম কি জানো? সারা। কথা বলবে তোমার মেয়ের সাথে?” আঁতকে উঠল মুহিবুল। কানে তালা লেগে গেছে আকাশের । ভয় এবং আশঙ্কার সংমিশ্রণের কালো একটা ছায়া ফুটেছে তার মুখে। মাথায় ঘুরছে, সব শেষ করে দেবে সে। প্রচন্ড কাঁপুনি দিয়ে কেঁদে উঠল আকাশ । “দেখতে চাও তোমার মেয়েকে? চলে এসো তোমার ফ্ল্যাটে। একাই এসো। নয়ত আমি একা এখান থেকে চলে যাব।” কেটে গেল ফোন। ঝড়ের বেগে উঠে গেল আকাশ । পিছু পিছু মুহিবুল আসতে চাইল, আকাশ হাতজোড় করে নিজের মেয়ের জীবন ভিক্ষা চাইল মুহিবুলের কাছে। প্রথমবারের মত নির্মম এক সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে তরুন এই গোয়েন্দা। পুরো ফ্ল্যাট অন্ধকার, ইলেক্ট্রিসিটি নেই। বুক কাঁপছে আকাশের । বারবার মাথা থেকে কুচিন্তাটা দুর করে দিতে চাইছে। ভাবছে, যত বড় ক্ষতিই করুক না কেন, একটা বাচ্চা মেয়ে কেন নির্মমতার শিকার হবে। হঠাৎ কানে একটা ঝুনঝুনির আওয়াজ পেল। যেন নতুন জীবন ফিরে পেল আকাশ । নিজের রুমে ঢুকতেই দমকা হাওয়ায় খুশির মোমবাতি নিভে গেল যখন দেখল ঝুনঝুনিটি ছেলেটার হাতে। ভরা জোছনা বারান্দার কাঁচ ভেদ করে ঘরে ঢুকছে। “আমার মেয়ে কোথায়?” জানতে চাইল আকাশ । “হুশশশ”, মুখে আঙুল দিয়ে চুপ করতে বলল ছেলেটা। এক কোণের দোলনাটা দেখিয়ে বলল, “সারা ঘুমুচ্ছে।” টালমাটাল আকাশ দোলনার কাছে গিয়ে ছোট্ট পরীটাকে একনজর দেখল। চোখ ভেঙে অশ্রু বেয়ে পড়ছে দুগাল বেয়ে। কিচ্ছু করার নেই। “বসো আকাশ । কিছু কথা বলি।” ছেলেটার কথায় বিছানায় বসে দোলনার দিকে তাকিয়ে থাকল আকাশ । “তোমাকে একটা গল্প বলি। আজ থেকে ছয় বছর আগের ঘটনা। একটা মেয়েকে খুব ভালোবাসতো একজন। তার নাম জান্নাত । পরিবারের ছোট মেয়ে ছিল সে। আমার একমাত্র স্বপ্ন ছিল জান্নাত । তখন আমি মাত্র কলেজ শেষ করেছি, ও পড়ত ক্লাস টেনে। দিনটি ছিল ১৭ই ফেব্রুয়ারী ২০০৯, যেদিন তুমি নিজ হাতে গলা টিপে মেরে ফেলেছিলে আমার স্বপ্নকে। কিছু মনে পড়ছে তোমার?” আকাশ এখনও দোলনার দিকে তাকিয়ে আছে। অপলক। কিচ্ছু মনে নেই ওর। শুধু ১৭২ সংখ্যাটার অর্থ বুঝতে পারল। “তুমি সেদিন ছিলে বদ্ধ মাতাল। পর্নোগ্রাফি আর মদ ছাড়া তোমার জীবনে আনন্দ বলতে কিছু ছিলনা তখন। আমার জান্নাত কে রেপ করলে তুমি, আজ থেকে পাঁচ বছর আগে। মনে পড়ছে?” মাথা নিচু করে শুনছে আকাশ । হঠাৎই সব মনে পড়ে গেছে তার। সম্মোহন অবস্থাটা নিমিষেই কেটে গেল। স্পষ্ট চোখের সামনে ভাসছে সেই দিনের কথা। “জান্নাত ” শব্দটাই ট্রাম্প করে তোমাকে হিপনোটাইজড করেছিলেন ডঃ ফখরুল আলম,তোমার বাবা। “জান্নাত র আর্তনাদ, সেই করুণ আকুতি মাখা চিৎকার আমি শুনতে পারছিলাম একশ কিলোমিটার দুর থেকে। এটাকে কি বলে জানো? মনের টান। হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলে তুমি। সহ্য করতে না পেরে অজ্ঞান হয়ে পড়ে ছোট্ট মেয়েটা।” স্তব্ধ হয়ে শুনছে আকাশ । কথা বলার মত অবশিষ্ট শক্তি নেই তার। “সেই রাতেই ঘটনা জানতে পারেন তোমার বাবা। সম্মানী একজন ব্যক্তির ছেলে এতটা নিচে নামতে পারে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল তার। তোমার স্মৃতি মুছে দিতে নিজেও ব্যবহার করেন অতি নিম্নমানের কৌশল। এমনভাবে হিপনোটাইজড করে ফেলেন তোমাকে, যেন সেটাকে অ্যামনেসিয়া বলে চালিয়ে দেয়া যায়। কিন্তু তিনি পারেননি। ভোর হবার আগেই ঝামেলা শেষ করতে চাইছিলেন তোমার বাবা। কিন্তু জান্নাত তো অজ্ঞান। তাকে কিভাবে হিপনোটাইজড করবেন? জ্ঞান ফিরলেও তো শান্ত করা যাবে না তাকে। মনে পড়ে তোমার বাবা কি করেছিলেন সেই রাতে? তিনি এখন কোথায় জানো? বেঁচে আছেন কিনা জানিনা, গতবছর যখন শেষ তার সাথে দেখা হয়েছিল, উনি জার্মানিতে ছিলেন। হাত দুটো ার জিহবা কেটে নিয়ে এসেছিলাম।” আকাশ নিরুত্তর। যেন কোনও কথাই কান দিয়ে ঢুকছে না। দীর্ঘশ্বাস নিয়ে আওড়াতে থাকে, “মেরে ফেল আমাকে, আমার মেয়েটাকে বাঁচতে দাও।” চিৎকার করে ওঠে ছেলেটা। “তুমি আমার সবচেয়ে কাছের মানুষটাকে মেরে ফেলেছিলে। দাফন, জানাজা ছাড়া জীবন্ত কবর দেয়া হয়েছিল জান্নাত কে। তারপরও কিভাবে বলছ তোমার মেয়েকে ছেড়ে দেব?” তবে হ্য তোমার পরিবারের অন্য সবাইকে যে শাস্তি দিয়েছি তোমাকে তা দেব না । জান্নাত মারা যাবার তিন মাস পর একি রাতে তোমার পরিবারের সবাইকে মেরেছিলাম । শুধু তোমাকে ার তোমার বাবাকে তখন পাইনি । তোমার বোনের কথা মনে আছে । সেবার সে গর্ভবতী ছিল । জননাঙ্গ দিয়ে লোহার রড ঢুকিয়ে দিয়েছিলাম । পেট চিরে দেখলাম , জরায়ু ছিড়ে একটা বাচ্চার মাথা বের হয়ে এসেছে । তাদের সব মাংস গুলি একটা হোটেলে চালান করে দিয়েছিলাম। হোটেল ম্যনেজার পড়ে বলেছিল ফোন করে... মহিলার চেয়ে বাচ্চাটাকেই নাকি সবার সুস্বাদু মনে হয়েছিল বেশি। কাঁদছে আকাশ । একটু পরেই সব শেষ হয়ে যাবে তার। সব। দোলনা থেকে সারাকে কোলে তুলে নিল ছেলেটা। এখন সে চলে যাবে। “আমি আমার সিদ্ধান্ত পাল্টে ফেলেছি। তোমাকে আমি মারব না। সারাটা জীবনে অনুতাপের আগুনে পুড়বে তুমি। তোমাকে আত্মহত্যাও করতে দেবনা আমি। আর তোমার মেয়েকে আমি বড় করব। তোমার থেকে অনেক দুরে নিয়ে যাব ওকে। বাজারি বানাবো মেয়েটাকে। প্রতিদিন রেপড হবে এই মেয়েটা। তোমার চোখের সামনে ওকে বেচব আমি। এটাই তোমার শাস্তি। জান্নাত যদি তোমারই পরিবারে জন্মে এতটা জঘন্য পরিনতির শিকার হয়, তোমার শাস্তি তো এর তুলনায় নগন্য। ভালো থেকো আকাশ ।” কঠিন এক শাস্তির মুখোমুখি আকাশ । আজ থেকে শুরু হল দিনগণনা। প্রতিটি সেকেন্ডকে মনে হবে একেকটি আলোকবর্ষ। দুঃসহ এক জীবনের নবসূচনা শুরু হল আজ। #সাইকো

By kolpobazz

No comments:

Post a Comment

Popular Posts