আমি জীবনে যখন
প্রথম ‘ক্রাশ খাই’,তখনও বাগধারাটার মানে জানতাম না।
জানার কথাও না, কারণ বাগধারাটার মতই খাদ্যদ্রব্য হিসেবে ‘ক্রাশ’ বেশ আধুনিক।ক’দিন আগে রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলাম,
একটা গান কানে এলো পথের ধার থেকে“এর বেশি ভালোবাসা যায় না,ও আমার প্রাণপাখি ময়না“।
প্রেমিক লোকের চিৎকার করা আর্তনাদ।এই প্রেমিক গায়ক আবার ভালোবাসার একটা স্কেল আবিষ্কার করেছেন,যার সর্বোচ্চ রেটিং এর ভালোবাসা তিনি বেসেও ফেলেছেন।সম্ভবত এইটা চেক করে দেখার পর তিনি আরো জোরে চিৎকার করছিলেন,এবং তার সমস্ত চিৎকার তার প্রাণপাখি ময়নার উদ্দেশ্যে হলেও ভুলক্রমে আমার সাথে আরও বহু পথচারীর কর্ণকুহর ফুটো করে দেয়ার উপক্রম করছিলো।
আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিলো এই “ময়না” কি আসলেই শুনবে? ময়নারা কি এইসব গান শুনে গলে যায়,নাকি তব্দা খায়? ফলাফল যা-ই হোক,ময়নাপাখি, জান,জান্টু,মন, প্রাণ,বেবি,হানিটাইপের শব্দ দিয়েই প্রেম হয় এখন।
আম্মা-আব্বার নাম আবেগ আর ভালোবাসার কাছে রিনেম হয়ে ওই কয়টা নামেই রুপান্তরিত হয়।
আমার কাছে এখন জীবনটাকে মনে হয় এক দ্রুতগামী ট্রেন কিংবা বাসের মত।কেননা যতক্ষণই ছুটে চলছি ততক্ষণ পিছু ফিরে তাকাবার সময় নেই,সময় নেই অতীতকে কাছে টানবার,তাকে নিয়ে ভাববার, শুধুই ভুলে থাকা।
প্রথম প্রথম কাউকে মরতে দেখলে ব্যথা পেতাম।কেমন যেন দুর্বল হয়ে পড়তাম।কখনও চোখের কোণে একফোঁটা অশ্রুও হয়ত জন্ম নিত।
এখন অনেকটা সহজ হয়ে গেছি।
কী জানি,হয়ত অনুভূতিগুলো ভোঁতা হয়ে গেছে।কিছু মানুষ স্বপ্ন দেখে কিন্তু একটাও পূরণ হয় না।প্রত্যেকদিন দেখে প্রত্যেকদিন ভাঙে—তবুও স্বপ্ন দেখা ছাড়ে না।এই ভাঙ্গাগড়া নিয়েই তারা সারা জীবন কাটিয়ে দেয়।
আমি অনেকটা তাদের মত।আজ আবার অনেক দিন পর যখন পিছন ফিরে তাকালাম তখন দেখি,সব কিছু ভীষণ রকম পাল্টে গেছে।
অস্পষ্ট হতে থাকা মানুষগুলো,স্বপ্নগুলো, ইচ্ছেগুলো,বয়ে চলা এই সময়ের মধ্যে এতটাই পাল্টে গেছে যে,
সেই সব কিছুকে এখন শুধু হাতড়েই বেড়াচ্ছি,ছুঁতে আর পারছি না। বেশ যন্ত্রণা হচ্ছে, সামান্য স্পর্শ পাওয়ার জন্যেও খুব চেষ্টা করছি।
কিন্তু সেই সব অনুভূতি-স্মৃতি ধরা-ছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে।কেন ফিরে পেতে চাইছি সেই মানুষকে যে আজ হারিয়ে গেছে,অথবা যার স্মৃতি?সেই চলে যাওয়া সময়কে কেন হাতের মুঠোয় আটকে রাখতে চাইছি?
কেন আমার সেই হারিয়ে যাওয়া মুহূর্তগুলোকে খুঁজে চলেছি একমনে?জানি না।আমি সত্যিই জানি না,
কেন আজ বারে বারে হারিয়ে যাওয়া সেই সবকিছুকে ফিরে পেতে চাইছি।সবাই বোধহয় ‘একা’ মুহূর্তে এই রকমটা ভাবে।কেন আজ নিয়ন আলোয় উদ্দেশ্যহীনভাবে হাঁটতে ইচ্ছে করছে না সেই প্রথম শহরবিলাসীর মতো?
কেন আজ বারে বারে মনে করিয়ে দেয় যে প্রত্যেকটা দিনই বড় একঘেয়ে। আর এই একঘেয়েমি থেকে আমি পালাতে পারব না।
কেন আজকে কোন যুক্তি মেনে নিতে ইচ্ছে করছে না।
কেন নিজেকে বোঝাতে পারছি না,আমি অতীতকে খুঁজছি কারণ ভবিষ্যতের ভাবনা থেকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। বেশিরভাগ মানুষের মত আমিও হয়ত চেনা জগৎ থেকে বেরোতে ভয় পাচ্ছি।
অচেনা, অদেখা, অপরিচিত ভবিষ্যতের আশঙ্কার ভাবনা থেকে দূরে থাকার জন্য অতীতকে খুঁজতে চেষ্টা করছি বারে বারে।
.কল্পলোকের কল্পবাজ একজন ভাল লেখককে সহজেই ভাল মানুষ ভেবে নেয়াটা বোকামী। যেমন একজন ভাল ডাক্তার ভাল মানুষ নাও হতে পারে। বাংলাদেশে যত জন ডাক্তার আছে এরা সবাই যদি ভাল মানুষ হত, যদি প্রত্যেকটা ডাক্তার দিনে তিনটা করে রোগী বিনা পয়সায় দেখত তাহলে আর এদেশে কেউ বিনা চিকিৎসায় মারা যেতনা।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Popular Posts
-
সাইকো ডায়েরি https://ift.tt/3297LcL
-
রুপাকে নিয়ে অনেক গল্প হয়, অনেক কথা, কিন্তু কেউ তাকে প্রকাশ্যে কিছু বলে না। যেন কী এক গোপন শলাপরামর্শের মতো—কেবলই ফিসফাস, কেবলই কানাকানি, ...
No comments:
Post a Comment